|
|
কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
সৈয়দ আবু সাদেক
কেন্দুয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত "কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই-বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়" একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিগত দেড়শত বৎসরের অধিক কাল যাবৎ ইহা এতদাঞ্চলের শিক্ষার দীপ-শিখা অনির্বাণ রেখেছে। বিদ্যালয়টির ইতিহাস প্রাচীনতম। বিদ্যালয়টি ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত।
বিদ্যালয়টির নামের দু‘টি শব্দ পাঠক ও শ্রোতার মনে প্রশ্ন জাগায়। শব্দ দু‘টি হল- "জয়হরি" ও "স্প্রাই"। একশত পঞ্চান্নটি শীত বসন্ত অতিক্রম করে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে অগ্রগতি লাভ করার ফলে শিক্ষার রকম ফের ও নামের বিবর্তন ঘটেছে। ১৯১২ সালের একটি বাঁধাই করা খাতায় একটি সীল মোহর পাওয়া গেছে। ইংরেজ রাজত্বর দু‘টি সিংহের প্রতীক সহ উহাতে লিখা রয়েছে Kandiura School, Established-1832, Kendua, Mymensingh. এ প্রতিষ্ঠানে কি ধরণের লেখা-পড়া হ‘ত তার ইতিহাস জানা যায়নি।
১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার তদানীন্তন জেলা-ম্যাজিষ্ট্রেত মিঃ বেব্রসের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি "মিডিল ভার্নাকুলার স্কুল" (Middle Vernacular School) হিসেবে চালু করা হয়। উহাতে শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজী।
১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে মিডিল ভার্নাকুলার স্কুলটি মিডিল ইংলিশ স্কুল (Middle English School) হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী প্রচলন করে উক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ ও গৌরব অর্জন করে। বাংলা, ইংরেজী, অংক, ইতিহাস, ভূগোল ও হিন্দু মুসলমানের ব্যাপক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা উহাতে ছিল। তখন বিদ্যালয়টি "কান্দিউড়া এম.ই. স্কুল" নামে আখ্যায়িত ছিল।
কান্দিউড়া কেন্দুয়া থানার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামের নাম। কেন্দুয়া তখন সর্বত্র কান্দিউড়া নামেই পরিচিত ছিল। কেন্দুয়া থানা হ‘তে উত্তর পশ্চিমে এক মাইল দূরবর্তী একটি গ্রামের নাম কেন্দুয়া। কেন্দুয়া পুলিশ ষ্টেশনটি ঐ গ্রামের নামে কেন্দুয়া থানা নামকরণ করার অন্য কারন ছিল। মিডিল ইংলিশ স্কুল হিসেবে ১৮৯২ হ‘তে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সারা ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে কান্দিউড়া এম.ই. স্কুল প্রচুর সুনাম অর্জন করে। উহা তখন "এ" স্কুল ছিল। তখনকার দিনে কোন ছাত্রের পক্ষে বৃত্তি প্রাপ্তি বিরাট প্রতিযোগিতার ব্যাপার ছিল। বৃত্তির সংখ্যা ছিল নিতান্ত কম। কান্দিউড়া এম.ই. স্কুলের শিক্ষার মান অত্যন্ত উন্নত ছিল যার ফলে প্রতি বৎসর উক্ত স্কুল হ‘তে একাধিক দূর্লভ বৃত্তি লাভ করে ছাত্ররা নিজেদেরকে এবং স্কুল ও এলাকাকে সম্মানিত করত। ১৮৯২ সালে এম.ই. স্কুলের সৃষ্টি হ‘তে ১৯১৮ সালে হাই স্কুলের সহিত একাত্রিভূত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কেন্দুয়ার অদূরবর্তী পালড়া গ্রাম নিবাসী শ্রী কেদার নাথ চক্রবর্তী উহার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শ্রী কেদার নাথ চক্রবর্তী ১৯১৮ সালের জানুয়ারীতে হাই স্কুলের ষষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৩৩ সালে শিক্ষকতা হ‘তে অবসর গ্রহণ করেন। ইংরেজী শাসনামলে কেন্দুয়া বিভিন্ন জমিদার তালুকদারের খাজনা আদায়ের একটি প্রসিদ্ধ কেন্দ্র ছিল। এখানে মুক্তাগাছা, আঠারবাড়ী, সাড়ে চার আনি, ধানকুড়া, প্রভৃতি জমিদার তালুকদারের কাচারী ছিল। জমিদার তালুকদার এবং তাদের নায়েবগন-ই ছিলেন অত্র এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ১৮৪৪ সালে কেন্দুয়া পুলিশ ষ্টেশন "কেন্দুয়া থানা" নামে স্থাপিত হওয়ার পর কিছু সংখ্যক অফিস আসে ও অফিসারের আগমন হয়। কান্দিউড়া এম.ই. স্কুলকে হাই ইংলিশ স্কুল (High English School) এ উন্নীত করার ব্যপারে ঢাকা বাসী সাড়ে চার আনির জমিদার শ্রী রণদা কুমার চৌধুরী ও কেন্দুয়া তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রী অক্ষয় কুমার গুপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
:
:
:
:
চাঁদা দাতার তালিকায় চাঁদার পরিমাণ চার আনা হ‘তে দু‘টাকা পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। বড় বড় জমিদারগণ সর্বোচ্চ মাসিক দু‘টাকা চাঁদা দান করেন। তখন টাকার মূল্যমান যে কত বেশী ছিল বিদ্যালয়ের কমিটির সেই সময়কার একটি সিদ্ধান্ত হ‘তে তা প্রতীয় মান হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাসার সার্বিক মেরামতের খরচ বাবদ মবলগ ২ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
বিদ্যালয়টিকে হাই ইংলিশ স্কুলে রুপান্তরিত করার জন্য বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও উহার মঙ্গলাকাঙ্খীগণ ময়মনসিংহের তদানীন্তন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সমর্থ হন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ স্প্রাই-সস্ত্রীক গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য চাঁদা তোলার ব্যাপারে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরাই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সাল হ‘তে এম.ই. স্কুলটি হাই ইংলিশ স্কুল হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃত প্রাপ্ত হয় এবং ১৯১৫ সাল হতে ছাত্রগণ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার সুযোগ লাভ করে। তাছাড়া প্রথম বারের মত বিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক ছাত্রের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাও স্প্রাই সাহেবের সক্রিয় সহযোগিতার ফসল। হাই স্কুল উন্নীত করার বিষয়ে স্প্রাই সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিকতাপূর্ণ ও নিঃস্বার্থ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে কেন্দুয়াবাসী ময়মনসিংহ জেলার তদানীন্তন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ এইচ.ই. স্প্রাই আই.সি.এস. কে বিদ্যালয়ের নামের সহিত যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই, ১৯১৪ সাল হ‘তে "কান্দিউড়া এম.ই." স্কুলকে "কেন্দুয়া স্প্রাই ইনস্টিটিউশন" নামে অভিহিত করা হয়। উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়রূপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি কিছুকাল অব্যাহত থাকে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানকল্পে ইংরেজী বিরোধী ভারতবর্ষ ব্যাপী আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচী ছিল "অসহযোগ আন্দোলন"। স্কুল-কলেজের শিক্ষা বর্জন ছিল অসহযোগ আন্দোলনের অর্ন্তভুক্ত। ব্যাপকভাবে স্কুলের শিক্ষা বর্জনের ফলে দেশের অন্যান্য স্কুলের ন্যায় কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যাও বিপুলভাবে হ্রাস পায়। লেখাপড়া বর্জনকারী শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশী ছাত্র স্কুলের শিক্ষা জীবনে আর ফিরে না আসার কারণে স্কুলের আর্থিক দৈন্যতা দেখা দেয়। স্কুলের আর্থিক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠার উদ্দেশ্যে স্কুলের এলাকার ভিতর ও বাহিরে সাহায্য ও সহযোগিতার আবেদন করা হয়। কেন্দুয়ার অদূরবর্তী সাজিউড়া গ্রামের আধিবাসী কেন্দুয়ার কৃতি সন্তান শ্রী নলিনী রঞ্জন সরকার তখন বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য। ১৯২৫ সালের ৭ই ডিসেম্বর কমিটির সভাপতির উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের সাহায্যার্থে কলিকাতা হ‘তে দশ (১০,০০০) হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতিমূলক পত্র তিনি প্রেরণ করেন। বিদ্যালয়ের তদানীন্তন কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রেরিত পত্রের কোন জবাব না দিয়ে নলিনী সরকারের দানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানপূর্বক-চিথোলিয়া গ্রামের পাল চৌধুরী পরিবারের জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক মহিম চন্দ্র চৌধুরীর পেশকৃত ০৩-০১-১৯২৬ তারিখের পত্রের মর্মানুযায়ী ০৬-০১-১৯২৬ তারিখেই অনুষ্ঠিত বিদ্যালয়ের কমিটির এক অধিবেশনে চার (৪,০০০) হাজার টাকা অনুদান প্রাপ্তির আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তিন (৩,০০০) হাজার টাকা পেয়েই বিদ্যালয়ের নামের সহিত পাল পরিবারের র্ভূতপূর্ব জনৈক পালের নাম সংযুক্ত করে বিদ্যালয়ের নাম "কেন্দুয়া স্প্রাই-ইনষ্টিটিউশন" এর স্থলে "কেন্দুয়া-জয়হরি-স্প্রাই ইনষ্টিটিউশন" রাখার সিদ্ধান্ত কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে এবং সাত সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। নলিনী সরকারের প্রস্তাব ছিল তাঁর পিতা চন্দ্রনাথ সরকারের নাম বিদ্যালয়ের নামের সহিত সংযুক্ত করা। সরকার পরিবারের চেয়ে পাল চৌধুরী পরিবারের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় নলিনী সরকার পরাজয় বরণ করেন পরাজয়ের গ্লানি আজীবন বহন করতে হয় কেন্দুয়া স্কুলের। বিরাট নৈতিক, আন্তরিক ও অফুরন্ত আর্থিক সাহায্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থেকে চিরতরে বঞ্চিত থাকে কেন্দুয়া স্কুল এবং কেন্দুয়া এলাকা। স্বকীয় সাধনা ও যোগ্যতার সাফল্যের সঙ্গে বিজয়ী অবিভক্ত ভারতের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে নলিনী রঞ্জন সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রস্তাবিত কেন্দুয়ার চন্দ্রনাথ স্কুল নেত্রকোণাতে স্থাপিত হয়ে কালের সমীক্ষারুপে সগৌরবে আজও অস্তিত্বে বিদ্যমান।
খেলাফত আন্দোলনের প্রাবল্য হ্রাস পেলেও ভারতকে ইংরেজ শাসন মুক্ত করার জন্য কার্যাবলী হ্রাস পায়নি , বরং ইংরেজ বিরোধী জনমত প্রবলতরভাবে দানা বাঁধতে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, ১৯৪৩ সালের আকাল, রোগ ও মহামারীর ফলে অবিভক্ত ভারতের শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্থ ও বিপর্যস্ত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের লেখাপড়ায় ভাটা পরে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পাঠ্য জীবন সবচেয়ে ব্যাহত হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের সম্ভাবনার মুহূর্তে পূর্ব বঙ্গের হিন্দুগণ অধিকাংশতঃ দেশত্যাগের ফলে স্কুল-কলেজ এ ব্যাপকহারে ছাত্রসংখ্যা হ্রাস পায় এবং শিক্ষকের অভাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৫ হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন।
১৯৪৭ সাল হতে পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক অসুবিধা কাটিয়ে উঠার পর শিক্ষা খেত্রে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। পাকিস্তান সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৬১ সাল হতে কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ ঘটে। স্কুলটি দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা পরিকল্পনার আওতাভুক্ত হওয়ার ফলে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাব-পত্র ও স্কুল-গৃহের অনুদানের জন্য উল্লেখযোগ্য সরকারী অনুদান লাভ করে। ১৯৬৬ সালে বিদ্যালয়টি সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে মানবিক, বিজ্ঞান ও কৃষি-বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক শাখায় লেখাপড়ার সুযোগ উন্নত হয়। এর ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং যথোপযুক্ত শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও প্রতিপালন সম্ভব হয় ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত বৃদ্ধি পায়, মাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশের মফস্বল এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে কেন্দুয়া উচ্চ বিদালয় একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। ৫/৬ বৎসর পূর্বে সারা বাংলাদেশে কিছু সংখ্যক বেসরকারি স্কুলকে সরকারী পর্যায়ভুক্ত করার ব্যাপারে যে ৮ টি স্কুলের তালিকা প্রস্তুত করা হয় তাতে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ছিল। ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী কেন্দুয়া বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ছাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৭০০ ছিল। ১৯৭৯ হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক পরিক্ষায় (এস.এস.সি) তে উত্তীর্ণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৩২৯ জন। উক্ত পরীক্ষায় প্রতি বছর পাশের গড় সংখ্যা ৭৮ জন। এর মধ্যে ২৪৩ জন প্রথম বিভাগে, ৭৩৯ জন দ্বিতীয় বিভাগে এবং ৩৪৭ জন তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। পাশকৃত ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রতি বছর বিভিন্ন বিষয়ে ১৫/২০ টি লেটার পেয়ে আসছে। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ লেটার সংখ্যা ৬। ১৯৮৩ সালে একজন ছাত্র স্টার নম্বর পায় এবং ১৯৮৪ সালে দু'জন ছাত্রী কৃষি-বিজ্ঞানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ২য় ও ৮ম স্থান অধিকার করে ।
জুনিওর বৃত্তি পরিক্ষায় গড়ে ২ জন ছাত্র রীতিমত ১ম ও ২য় গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে আসছে। এ স্কুলের ছাত্র প্রতি বছর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য ক্যাডট কলেজ, নটরডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ লাভ করেছে। কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে পাসকৃত উল্লেখযোগ্য শঙ্খক ছাত্র এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ব্যাংকিং, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সামরিক ও বেসামরিক চাকুরীজীবী হিসেবে দেশের খেদমতে নিয়োজিত আছে।
এছাড়া আরও দুজন ছাত্র ১৯৭২ ও ১৯৮১ তে কৃষি শাখায় মেধাতালিকায় স্থান লাভ করে। এ বছর অর্থাৎ ২০০০ ইং এ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় দু'জন ট্যালেন্টপুলে ও তিনজন সাধারণগ্রেড এ বৃত্তি লাভ করে।
সৈয়দ আবু সাদেক
অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
সৈয়দ আবু সাদেক
কেন্দুয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত "কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই-বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়" একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিগত দেড়শত বৎসরের অধিক কাল যাবৎ ইহা এতদাঞ্চলের শিক্ষার দীপ-শিখা অনির্বাণ রেখেছে। বিদ্যালয়টির ইতিহাস প্রাচীনতম। বিদ্যালয়টি ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত।
বিদ্যালয়টির নামের দু‘টি শব্দ পাঠক ও শ্রোতার মনে প্রশ্ন জাগায়। শব্দ দু‘টি হল- "জয়হরি" ও "স্প্রাই"। একশত পঞ্চান্নটি শীত বসন্ত অতিক্রম করে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে অগ্রগতি লাভ করার ফলে শিক্ষার রকম ফের ও নামের বিবর্তন ঘটেছে। ১৯১২ সালের একটি বাঁধাই করা খাতায় একটি সীল মোহর পাওয়া গেছে। ইংরেজ রাজত্বর দু‘টি সিংহের প্রতীক সহ উহাতে লিখা রয়েছে Kandiura School, Established-1832, Kendua, Mymensingh. এ প্রতিষ্ঠানে কি ধরণের লেখা-পড়া হ‘ত তার ইতিহাস জানা যায়নি।
১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার তদানীন্তন জেলা-ম্যাজিষ্ট্রেত মিঃ বেব্রসের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি "মিডিল ভার্নাকুলার স্কুল" (Middle Vernacular School) হিসেবে চালু করা হয়। উহাতে শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজী।
১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে মিডিল ভার্নাকুলার স্কুলটি মিডিল ইংলিশ স্কুল (Middle English School) হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী প্রচলন করে উক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ ও গৌরব অর্জন করে। বাংলা, ইংরেজী, অংক, ইতিহাস, ভূগোল ও হিন্দু মুসলমানের ব্যাপক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা উহাতে ছিল। তখন বিদ্যালয়টি "কান্দিউড়া এম.ই. স্কুল" নামে আখ্যায়িত ছিল।
কান্দিউড়া কেন্দুয়া থানার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামের নাম। কেন্দুয়া তখন সর্বত্র কান্দিউড়া নামেই পরিচিত ছিল। কেন্দুয়া থানা হ‘তে উত্তর পশ্চিমে এক মাইল দূরবর্তী একটি গ্রামের নাম কেন্দুয়া। কেন্দুয়া পুলিশ ষ্টেশনটি ঐ গ্রামের নামে কেন্দুয়া থানা নামকরণ করার অন্য কারন ছিল। মিডিল ইংলিশ স্কুল হিসেবে ১৮৯২ হ‘তে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সারা ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে কান্দিউড়া এম.ই. স্কুল প্রচুর সুনাম অর্জন করে। উহা তখন "এ" স্কুল ছিল। তখনকার দিনে কোন ছাত্রের পক্ষে বৃত্তি প্রাপ্তি বিরাট প্রতিযোগিতার ব্যাপার ছিল। বৃত্তির সংখ্যা ছিল নিতান্ত কম। কান্দিউড়া এম.ই. স্কুলের শিক্ষার মান অত্যন্ত উন্নত ছিল যার ফলে প্রতি বৎসর উক্ত স্কুল হ‘তে একাধিক দূর্লভ বৃত্তি লাভ করে ছাত্ররা নিজেদেরকে এবং স্কুল ও এলাকাকে সম্মানিত করত। ১৮৯২ সালে এম.ই. স্কুলের সৃষ্টি হ‘তে ১৯১৮ সালে হাই স্কুলের সহিত একাত্রিভূত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কেন্দুয়ার অদূরবর্তী পালড়া গ্রাম নিবাসী শ্রী কেদার নাথ চক্রবর্তী উহার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শ্রী কেদার নাথ চক্রবর্তী ১৯১৮ সালের জানুয়ারীতে হাই স্কুলের ষষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৩৩ সালে শিক্ষকতা হ‘তে অবসর গ্রহণ করেন। ইংরেজী শাসনামলে কেন্দুয়া বিভিন্ন জমিদার তালুকদারের খাজনা আদায়ের একটি প্রসিদ্ধ কেন্দ্র ছিল। এখানে মুক্তাগাছা, আঠারবাড়ী, সাড়ে চার আনি, ধানকুড়া, প্রভৃতি জমিদার তালুকদারের কাচারী ছিল। জমিদার তালুকদার এবং তাদের নায়েবগন-ই ছিলেন অত্র এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ১৮৪৪ সালে কেন্দুয়া পুলিশ ষ্টেশন "কেন্দুয়া থানা" নামে স্থাপিত হওয়ার পর কিছু সংখ্যক অফিস আসে ও অফিসারের আগমন হয়। কান্দিউড়া এম.ই. স্কুলকে হাই ইংলিশ স্কুল (High English School) এ উন্নীত করার ব্যপারে ঢাকা বাসী সাড়ে চার আনির জমিদার শ্রী রণদা কুমার চৌধুরী ও কেন্দুয়া তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রী অক্ষয় কুমার গুপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
:
:
:
:
চাঁদা দাতার তালিকায় চাঁদার পরিমাণ চার আনা হ‘তে দু‘টাকা পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। বড় বড় জমিদারগণ সর্বোচ্চ মাসিক দু‘টাকা চাঁদা দান করেন। তখন টাকার মূল্যমান যে কত বেশী ছিল বিদ্যালয়ের কমিটির সেই সময়কার একটি সিদ্ধান্ত হ‘তে তা প্রতীয় মান হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাসার সার্বিক মেরামতের খরচ বাবদ মবলগ ২ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
বিদ্যালয়টিকে হাই ইংলিশ স্কুলে রুপান্তরিত করার জন্য বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও উহার মঙ্গলাকাঙ্খীগণ ময়মনসিংহের তদানীন্তন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সমর্থ হন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ স্প্রাই-সস্ত্রীক গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য চাঁদা তোলার ব্যাপারে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরাই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সাল হ‘তে এম.ই. স্কুলটি হাই ইংলিশ স্কুল হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃত প্রাপ্ত হয় এবং ১৯১৫ সাল হতে ছাত্রগণ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার সুযোগ লাভ করে। তাছাড়া প্রথম বারের মত বিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক ছাত্রের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাও স্প্রাই সাহেবের সক্রিয় সহযোগিতার ফসল। হাই স্কুল উন্নীত করার বিষয়ে স্প্রাই সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিকতাপূর্ণ ও নিঃস্বার্থ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে কেন্দুয়াবাসী ময়মনসিংহ জেলার তদানীন্তন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ এইচ.ই. স্প্রাই আই.সি.এস. কে বিদ্যালয়ের নামের সহিত যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই, ১৯১৪ সাল হ‘তে "কান্দিউড়া এম.ই." স্কুলকে "কেন্দুয়া স্প্রাই ইনস্টিটিউশন" নামে অভিহিত করা হয়। উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়রূপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি কিছুকাল অব্যাহত থাকে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানকল্পে ইংরেজী বিরোধী ভারতবর্ষ ব্যাপী আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচী ছিল "অসহযোগ আন্দোলন"। স্কুল-কলেজের শিক্ষা বর্জন ছিল অসহযোগ আন্দোলনের অর্ন্তভুক্ত। ব্যাপকভাবে স্কুলের শিক্ষা বর্জনের ফলে দেশের অন্যান্য স্কুলের ন্যায় কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যাও বিপুলভাবে হ্রাস পায়। লেখাপড়া বর্জনকারী শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশী ছাত্র স্কুলের শিক্ষা জীবনে আর ফিরে না আসার কারণে স্কুলের আর্থিক দৈন্যতা দেখা দেয়। স্কুলের আর্থিক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠার উদ্দেশ্যে স্কুলের এলাকার ভিতর ও বাহিরে সাহায্য ও সহযোগিতার আবেদন করা হয়। কেন্দুয়ার অদূরবর্তী সাজিউড়া গ্রামের আধিবাসী কেন্দুয়ার কৃতি সন্তান শ্রী নলিনী রঞ্জন সরকার তখন বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য। ১৯২৫ সালের ৭ই ডিসেম্বর কমিটির সভাপতির উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের সাহায্যার্থে কলিকাতা হ‘তে দশ (১০,০০০) হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতিমূলক পত্র তিনি প্রেরণ করেন। বিদ্যালয়ের তদানীন্তন কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রেরিত পত্রের কোন জবাব না দিয়ে নলিনী সরকারের দানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানপূর্বক-চিথোলিয়া গ্রামের পাল চৌধুরী পরিবারের জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক মহিম চন্দ্র চৌধুরীর পেশকৃত ০৩-০১-১৯২৬ তারিখের পত্রের মর্মানুযায়ী ০৬-০১-১৯২৬ তারিখেই অনুষ্ঠিত বিদ্যালয়ের কমিটির এক অধিবেশনে চার (৪,০০০) হাজার টাকা অনুদান প্রাপ্তির আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তিন (৩,০০০) হাজার টাকা পেয়েই বিদ্যালয়ের নামের সহিত পাল পরিবারের র্ভূতপূর্ব জনৈক পালের নাম সংযুক্ত করে বিদ্যালয়ের নাম "কেন্দুয়া স্প্রাই-ইনষ্টিটিউশন" এর স্থলে "কেন্দুয়া-জয়হরি-স্প্রাই ইনষ্টিটিউশন" রাখার সিদ্ধান্ত কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে এবং সাত সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। নলিনী সরকারের প্রস্তাব ছিল তাঁর পিতা চন্দ্রনাথ সরকারের নাম বিদ্যালয়ের নামের সহিত সংযুক্ত করা। সরকার পরিবারের চেয়ে পাল চৌধুরী পরিবারের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় নলিনী সরকার পরাজয় বরণ করেন পরাজয়ের গ্লানি আজীবন বহন করতে হয় কেন্দুয়া স্কুলের। বিরাট নৈতিক, আন্তরিক ও অফুরন্ত আর্থিক সাহায্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থেকে চিরতরে বঞ্চিত থাকে কেন্দুয়া স্কুল এবং কেন্দুয়া এলাকা। স্বকীয় সাধনা ও যোগ্যতার সাফল্যের সঙ্গে বিজয়ী অবিভক্ত ভারতের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে নলিনী রঞ্জন সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রস্তাবিত কেন্দুয়ার চন্দ্রনাথ স্কুল নেত্রকোণাতে স্থাপিত হয়ে কালের সমীক্ষারুপে সগৌরবে আজও অস্তিত্বে বিদ্যমান।
খেলাফত আন্দোলনের প্রাবল্য হ্রাস পেলেও ভারতকে ইংরেজ শাসন মুক্ত করার জন্য কার্যাবলী হ্রাস পায়নি , বরং ইংরেজ বিরোধী জনমত প্রবলতরভাবে দানা বাঁধতে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, ১৯৪৩ সালের আকাল, রোগ ও মহামারীর ফলে অবিভক্ত ভারতের শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্থ ও বিপর্যস্ত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের লেখাপড়ায় ভাটা পরে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পাঠ্য জীবন সবচেয়ে ব্যাহত হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের সম্ভাবনার মুহূর্তে পূর্ব বঙ্গের হিন্দুগণ অধিকাংশতঃ দেশত্যাগের ফলে স্কুল-কলেজ এ ব্যাপকহারে ছাত্রসংখ্যা হ্রাস পায় এবং শিক্ষকের অভাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৫ হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন।
১৯৪৭ সাল হতে পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক অসুবিধা কাটিয়ে উঠার পর শিক্ষা খেত্রে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। পাকিস্তান সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৬১ সাল হতে কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ ঘটে। স্কুলটি দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা পরিকল্পনার আওতাভুক্ত হওয়ার ফলে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাব-পত্র ও স্কুল-গৃহের অনুদানের জন্য উল্লেখযোগ্য সরকারী অনুদান লাভ করে। ১৯৬৬ সালে বিদ্যালয়টি সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে মানবিক, বিজ্ঞান ও কৃষি-বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক শাখায় লেখাপড়ার সুযোগ উন্নত হয়। এর ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং যথোপযুক্ত শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও প্রতিপালন সম্ভব হয় ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত বৃদ্ধি পায়, মাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশের মফস্বল এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে কেন্দুয়া উচ্চ বিদালয় একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। ৫/৬ বৎসর পূর্বে সারা বাংলাদেশে কিছু সংখ্যক বেসরকারি স্কুলকে সরকারী পর্যায়ভুক্ত করার ব্যাপারে যে ৮ টি স্কুলের তালিকা প্রস্তুত করা হয় তাতে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ছিল। ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী কেন্দুয়া বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ছাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৭০০ ছিল। ১৯৭৯ হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক পরিক্ষায় (এস.এস.সি) তে উত্তীর্ণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৩২৯ জন। উক্ত পরীক্ষায় প্রতি বছর পাশের গড় সংখ্যা ৭৮ জন। এর মধ্যে ২৪৩ জন প্রথম বিভাগে, ৭৩৯ জন দ্বিতীয় বিভাগে এবং ৩৪৭ জন তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। পাশকৃত ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রতি বছর বিভিন্ন বিষয়ে ১৫/২০ টি লেটার পেয়ে আসছে। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ লেটার সংখ্যা ৬। ১৯৮৩ সালে একজন ছাত্র স্টার নম্বর পায় এবং ১৯৮৪ সালে দু'জন ছাত্রী কৃষি-বিজ্ঞানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ২য় ও ৮ম স্থান অধিকার করে ।
জুনিওর বৃত্তি পরিক্ষায় গড়ে ২ জন ছাত্র রীতিমত ১ম ও ২য় গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে আসছে। এ স্কুলের ছাত্র প্রতি বছর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য ক্যাডট কলেজ, নটরডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ লাভ করেছে। কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে পাসকৃত উল্লেখযোগ্য শঙ্খক ছাত্র এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ব্যাংকিং, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সামরিক ও বেসামরিক চাকুরীজীবী হিসেবে দেশের খেদমতে নিয়োজিত আছে।
এছাড়া আরও দুজন ছাত্র ১৯৭২ ও ১৯৮১ তে কৃষি শাখায় মেধাতালিকায় স্থান লাভ করে। এ বছর অর্থাৎ ২০০০ ইং এ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় দু'জন ট্যালেন্টপুলে ও তিনজন সাধারণগ্রেড এ বৃত্তি লাভ করে।
সৈয়দ আবু সাদেক
অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়